বেশ অসুস্থ লাগছে, শারীরিক বা মানসিক কারণে চিকিৎসকের
সাথে দেখা করা প্রয়োজন, অথচ বাইরের পরিস্থিতির কারণে কিংবা হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকায়
হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কখনো না কখনো নিশ্চয় এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে
আপনাকে? শুধু হাসপাতালে যেতে হবে বলেই নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেতে কিংবা যথাযথ কোন চিকিৎসকের
পরামর্শ পেতে অনেকটাই বেগ পেতে হয় বাংলাদেশের মানুষকে।
বিশেষ করে, বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারিকালীন
পরিস্থিতিতে দূরবর্তী চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রতুলতা অনেকটাই বড় আকারে আমাদের
চোখে ধরা পড়েছে। অথচ, বিশেষ বিশেষ সময়ে দূরবর্তী এই চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন,
যেখান একজন রোগী সশরীরে চিকিৎসকের সাথে দেখা না করে ইন্টারনেট বা মোবাইল ও টেলিফোনের
মাধ্যমে নিজের শারীরিক অবস্থা জানাবেন এবং চিকিৎসা সেবা পাবেন। বাংলাদেশে এখনো চিকিৎসা
সেবার এই দিকটি উন্নত না হয়ে উঠলেও বহির্বিশ্বে এই দূরিবর্তী চিকিৎসা সেবা গ্রহণের
পদ্ধতি ব্যবহার করছে অসংখ্য মানুষ।
আর দূর থেকেই চিকিৎসকের সাথে কথা বলার মাধ্যমে
তার চিকিৎসা সেবা গ্রহণের এই পদ্ধতিটিকেই বলা হয় টেলিমেডিসিন সেবা। এখন প্রশ্ন হলো,
টেলিমেডিসিন কীভাবে কাজ করে, এর শুরুটা কোথায়, এর খুঁটিনাটি সমস্ত তথ্য আজ জেনে নেবো
আমরা। চলুন তাহলে, শুরু করা যাক!
টেলিমেডিসিন কী?
স্বাস্থ্যসেবাকে যে ছোট্ট মাধ্যমটি অনেক বেশি
দ্রুত, সময়োপযোগী এবং দক্ষ করে তোলে- সেটিই টেলিমেডিসিন। বর্তমান প্রযুক্তিগত উন্নয়নের
যুগে এটি কেবল সহজপ্রাপ্যই নয়, বরং সহজলভ্যও। এতে খরচটা বাস্তবিকভাবেই সাধারণ আর সব
স্বাস্থ্যসেবা মাধ্যমের তুলনায় কম হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে বিশেষ করে দূরবর্তী গ্রামে বাস করছেন
এমন রোগীরা এবং বয়স বা অন্যান্য কারণে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার সুযোগ পাচ্ছেন না এমন
চিকিৎসকেরা সর্বোচ্চ উপকৃত হয়ে থাকেন। তবে এই দুইটি শ্রেণী ছাড়াও সকলের জন্যই এই টেলিমেডিসিন
সেবা উন্মুক্ত।
১৯৫০ সালে যাত্রা শুরু করা এই টেলিমেডিসিনে অ্যাপয়েন্টমেন্টের
বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই একজন রোগী বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে চিকিৎসকের সেবা ও পরামর্শ
পেতে পারেন। টেলিমেডিসিন যন্ত্রপাতির সাহায্যে চিকিৎসকেরাও রোগীদের প্রাথমিক পরীক্ষা
এবং রোগ শনাক্তের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করতে সমর্থ হন।
প্রাথমিকভাবে টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে চিকিৎসাক্ষেত্র
অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। আর এর পেছনে মূল কারণ ছিল প্রযুক্তির উন্নয়ন হলেও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে
প্রযুক্তিকে কাজে কম লাগানো। তবে বর্তমানে ধীরে ধীরে এই সমস্যা কেটে গিয়ে টেলিমেডিসিনের
ক্ষেত্রও বর্ধিত হয়েছে।
টেলিমেডিসিনের রকমভেদ
টেলিমেডিসিন হেলথকেয়ার বলতে সাধারণত একটি ব্যাপারকে
বোঝালেও টেলিমেডিসিন মোট তিনরকমভাবে বিভক্ত। সেগুলো হলো-
ইন্টারেক্টিভ মেডিসিনঃ
এই মাধ্যমে একজন রোগী ও চিকিৎসক একইসময়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত কথোপকথন চালাতে পারেন। চিকিৎসা সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত টেলিমেডিসিনের এই পদ্ধতিটিকে 'লাইভ টেলিমেডিসিন'ও বলা হয়। সাধারণত এইচআইপিপিএ টুলসের মাধ্যমে রিয়েল টাইমে চিকিৎসক ও রোগীকে যোগাযগের ব্যবস্থা করে দেয়
ইন্টারেক্টিভ মেডিসিন। এক্ষেত্রে ফোন এবং ভিডিও কনফারেন্স- দুটোকেই ব্যবহার করা
হয়। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক রোগীর মেডিকেল হিস্টোরি, তুলনামূলক শারীরিক অবস্থা এবং আর অনেক বিষয়াদি সম্পর্কে ভালোভাবে জানার
সুযোগ পান।
স্টোর এন্ড ফরওয়ার্ডঃ
এই মাধ্যমে রোগসংক্রান্ত কাগজ এবং তথ্য অন্য স্থানের চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। সাধারণত অন্য স্থানে নিজের রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি
পাঠানোর জন্যই এই টেলিমেডিসিন ব্যবহার করেন একজন ব্যক্তি। এক্ষেত্রে সাধারণ একজন
নার্স বা প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থান করছেন এমন একজন চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ কাউকে তথ্য
এবং কাগজাদি পাঠাতে পারেন পরবর্তী নির্দেশনা ও পরামর্শের
জন্য। এতে করে একজন চিকিৎসকের পক্ষে আর সহজে এটা জানা প্রয়োজন হয় যে, অন্যান্য চিকিৎসক এ ব্যাপারে আগে থেকেই কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এতে করে সময় কম দরকার হয় এবং রোগী খুব দ্রুত
যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করার সুযোগ পান।
রিমোট বা দূরবর্তী পেশেন্ট মনিটরিংঃ
এই ক্ষেত্রে একজন রোগী চিকিৎসকের কাছে দূর থেকেই নানারকম যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চিকিৎসা
পেতে, রক্তচাপ, রক্তের সুগারের পরিমাণ ইত্যাদি মাপতে পারেন। বিশেষ
করে বয়স্ক রোগীদের মধ্যে এই টেলিমেডিসিন পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়। কারণ মনিটরের
মাধ্যমেই এই পদ্ধতি একজন রোগীকে তার বাসস্থান থেকেই সবরকমের চিকিৎসা নিতে সাহায্য
করে। পেশেন্ট পোর্টালের মাধ্যমে একজন চিকিৎসক এক্ষেত্রে
রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য তথ্য জেনে নিতে
পারেন। এছাড়া নানারকম মেডিকেল ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারেও
লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে রিমোট পেশেন্ট মনিটরিং-এর মাধ্যমে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে
একজন রোগী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভ্রমণেও যেতে পারেন।
টেলিমেডিসিনঃ চিকিৎসকদের জন্য কতটা সহজ প্রক্রিয়া?
টেলিমেডিসিনের ব্যাপারটি সহজ মনে হলেও চিকিৎসকদের
এই সেবা প্রদানে কিছুটা বাড়তি শ্রম দিতে হয়। সাধারণ টেলিমেডিসিনে যোগাযোগের মাধ্যম
হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করা গেলেই অনেকটা কাজ হয়ে যায়। তবে এছাড়াও ভার্চুয়াল
ওয়েটিং রুম, পেমেন্ট প্রদান ইত্যাদি কাজ একইসাথে পরিচালনার প্রয়োজন পড়ে। নানাবিধ সফটওয়্যার
এবং নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলারও প্রয়োজন হয়
একজন রোগী টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে খুব দ্রুত চিকিৎসা
সেবা গ্রহণ করতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে ভার্চুয়াল এই চিকিৎসা গ্রহণের ব্যবস্থাটি বেশ
সহজ বলে মনে হয়। তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে চিকিৎসকদেরকেও বাড়তি কিছু কাঠখড় পোড়ানোর
প্রয়োজন পড়ে, যেটি টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাকে শক্ত অবস্থানে দাড় করাতে এবং এই সেবাকে সকলের
কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানের পদ্ধতিগুলো কী?
টেলিমেডিসিন বা দূরবর্তী চিকিৎসা সেবা প্রদানের
বেশ কয়েকটি পদ্ধতি বা পন্থা রয়েছে। সেগুলো হলো-
১। টেলিমেডিসিন ভিডিও টুলের মাধ্যমে খুব সহজেই
সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসক ও রোগী ভিডিও কলের মাধ্যমে একই সময়ে যোগাযোগ
করতে ও স্বাস্থ্যসক্রান্ত পরামর্শ আদানপ্রদান করতে সক্ষম হন।
২। এছাড়াও টেলিমেডিসিন পোর্টেবল কিটের মাধ্যমে
এই সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়। এই কিটে কম্পিউটার এবং মোবাইল মেডিকেল ডিভাইস সংযুক্ত
থাকে। এতে ইসিজি ও গুরুতপূর্ণ সাইন মনিটর অন্তর্ভূক্ত থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতামত জানার
জন্য এই কিটে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাও সংযুক্ত থাকে।
৩। সর্বশেষ উপায়টি হচ্ছে টেলিমেডিসিন সফটওয়্যার
ব্যবহার করা। এই সফটওয়্যারগুলোতে তথ্য সংগ্রহাগার থেকে শুরু করে কনফারেন্ট কল করার
ব্যাপারগুলোও একসাথে অন্তর্ভূক্ত থাকে। এছাড়া এতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে অনেক টেলিমেডিসিন
যন্ত্রপাতিও সংযুক্ত থাকে।
টেলিমেডিসিন ও টেলিহেলথঃ কতটুকু ভিন্ন?
এক নজরে টেলিমেডিসিন এবং টেলিহেলথকে একইরকম মনে
হয়। কিন্তু এই দুটো ব্যাপারই একেবারে ভিন্ন।
টেলিমেডিসিন হলো যন্ত্রপাতি বা সফটওয়্যার ব্যবহারের
মাধ্যমে দূরবর্তী অবস্থান থেকেও রোগীকে চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান।
অন্যদিকে, টেলিহেলথ হলো চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন
উন্নয়নের জন্য নানাবিধ প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা। টেলিহেলথের মধ্যে যেমন
টেলিমেডিসিন পড়ে, তেমনি চিকিৎসা সেবার আর অনেক খুঁটিনাটি দিকগুলোও পড়ে যায়।
তাই টেলিহেলথকে মূলত বড় একটি ব্যাপার বলে ধরে নেওয়া যায় যেটার একটি অংশ হিসেবে টেলিমেডিসিনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
টেলিমেডিসিনের ইতিহাস
প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা সেবার এই মিশ্রণকে নতুন
কোন ব্যাপার মনে করা হলেও আসলে কিন্তু তা নয়। টেলিমেডিসিন অনেক আগে থেকেই মানুষ ব্যবহার
করে চলেছে। মূলত, টেলিমেডিসিনের এই ধারণা ১৯ শতক থেকে জন্ম নেয়। যেখানে হাসপাতালগুলোর
মধ্যে কিছু হাসপাতাল দূরবর্তী রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য তাদের কাছে পৌঁছানোর ইচ্ছা
পোষণ করে। আর এটার জন্য তারা একটি সম্মিলিত পদ্ধতি অনুসরণের কথাও ভাবে। আমাদের বর্তমান
যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, তার পেছনেও রয়েছে টেলিমেডিসিনের ভূমিকা।
১৯ শতকে টেলিমেডিসিন
টেলিমেডিসিনের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় টেলিকমিউনিকেশনের
প্রাথমিক যন্ত্রপাতি, এই যেমন- টেলিগ্রাফ, টেলিফোন এবং রেডিও ইত্যাদির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে
গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি এবং মৃত মানুষের সংখ্যা জানানোর জন্য টেলিগ্রাফ ব্যবহার করা হয়।
চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও টেলিগ্রাফের মাধ্যমেই চাওয়া হয়।
১৮৭৯ সালে টেলিফোন চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে কতটা খরচ কমিয়ে আনতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে করে অফিশিয়াল পরিদর্শনের পরিমাণ এবং এ সংক্রান্ত খরচও কমে আসে। তবে এটা ছিলো একেবারেই প্রাথমিক অবস্থা।
২০ শতকে টেলিমেডিসিন
১৯২২ সালে ডক্টর হুগো জার্ন্সব্যাক একটি সায়েন্স
ম্যাগাজিনে অনুমান করেন যে, খুব দ্রুতই এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করা ও ব্যবহার করা
সম্ভব হবে যেটির মাধ্যমে চিকিৎসকেরা কয়েক মেইল দূর থেকে রোগীকে টেলিভিশন স্ক্রিনে দেখতে
এবং তাদের রবোটিক আর্ম দ্বারা ছুঁতে সক্ষম হবেন।
১৯৪৮ সালে পেনসিলভেনিয়ার দুইটি ভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুইজন স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা টেলিফোনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম রেডিওলজিক ইমেজ পাঠানো হয়। ১৯৫৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কার মেডিকেল শিক্ষার্থীরা একটি টেলিভিশনের মাধ্যমে স্নায়ু পরীক্ষার একটি প্রতিবেদন একে অন্যকে পাঠান। পাঁচ বছর পর এমন একটি ক্লোজ-সার্কিট টেলিভিশন লিংক পাঠানো হয় যেটি ১১২ মেইল দূরের নরফোক স্টেট হাসপাতালেও পাঠানো সম্ভব হয়।
বর্তমান টেলিমেডিসিন
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষেরই টেলিমেডিসিন
যন্ত্র, এই যেমন- টেলিফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে এই ব্যাপারটিকে
আরো বেশি সংগঠিত করার জন্য এবং চিকিৎসকদের সংগঠিত করার আমধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে টেলিমেডিসিন
সেবা প্রদানের জন্য মাধ্যম তৈরি করছে বিভিন্ন দেশ। 'প্রিয় ডাক্তার' তেমনই একটি মাধ্যম।
রোগীদের জন্য সঠিক কোন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ
করতে হবে সেটা জানা কঠিন হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসকেরাও অনেকসময় টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান
করতে অনিচ্ছুক হন যথাযথ ব্যবস্থা না থাকার কারণে। এই সমস্যাটিকে দূর করতেই বর্তমান
এই টেলিমেডিসিন কেয়ার ব্যবস্থা।
টেলিমেডিসিনের উপকারিতা কী?
প্রযুক্তি সবসময় মানুষের জীবনকে আর একটু বেশি সহজ করতে কাজ করে। টেলিমেডিসিনও তেমনই একটি উদাহরণ। ঠিক কোন কোন উপকারিতার জন্য টেলমেডিসিন ব্যবহার করবেন আপনি? টেলিমেডিসিনের উপকারিতা কী? চলুন, দেখে নেওয়া যাক।
১। সাশ্রয়ী সেবা
টেলিমেডিসিনের ইতিবাচক দিকগুলোর কথা বলতে গেলেই
যে ব্যাপারটি প্রথমেই চোখে পড়ে সেটি হচ্ছে এর সাশ্রয়ী সেবা। সাধারণত একজন চিকিৎসক তার
উপস্থিতি, সময়, পরিশ্রম, মেধা- এই সবটুকুর উপরে ভিত্তি করে তার ভিজিট নির্ধারণ করেন।
টেলিমেডিসিনে নির্দিষ্ট কোন চেম্বারে বসা বা অনেকটা সময় ব্যয় করার এই ধকলটি নেই। অন্যদিকে
রোগীকেও অনেকটাই কম খরচ করতে হয় এক্ষেত্রে। কারণ কোনরকম যাতায়াত ও বাড়তি খরচ ছাড়াই
তিনি শুধু টেলিমেডিসিন টুলের মাধ্যমেই সরাসরি নিজের বাসস্থান থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ
নিতে পারেন।
২। যাতায়াতের ধকল নেই
যাতায়াতের যেমন খরচ রয়েছে তেমনি রয়েছে ধকল। চিকিৎসক
যাতায়াত না করার ফলে তার সময় সাশ্রয় হয়। অন্যদিকে, একজন অসুস্থ রোগীকে অনেকটা পথ পাড়ি
দিয়ে শুধু চিকিৎসকের সাথে দেখা করার জন্য আসতে হয় না টেলিমেডিসিনে। দুটো দিকেই যাতায়াতের
যে বাড়তি ধকল সেটাকে কমিয়ে আনে টেলিমেডিসিন।
৩। অ্যাপয়েন্টমেন্টের ঝামেলা নেই
চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করার জন্য বা তার সেবা নেওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেককে। একদিকে রয়েছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার ঝামেলা, অন্যদিকে আছে অনেকটা সময় অপেক্ষা করার ব্যাপার। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ ও বিখ্যাত চিকিৎসকের সাথে দেখা করার জন্য দিনের পর দিন অনেককে অপেক্ষা করতে হয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে। টেলিমেডিসিনে সেসব ঝামেলা নেই। রোগী নিজের সমস্ত তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ইচ্ছে করলেই নির্দিষ্ট সময়ে সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সরাসরি রোগী দেখতেও কম সময় খরচ হওয়ায় চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি খুব একটা ঝামেলার হয় না। নিজের সময়মতও রোগী দেখার সময় এবং রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করার সময় বের করে নিতে পারেন তিনি।
৪। সর্বোচ্চ সেবা পাওয়ার সুবিধা
যেমনটা একটু আগেই বলা হলো, সাধারণ বিখ্যাত ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়াটা খুব কঠিন একটি ব্যাপার। আর সেজন্যেই এক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন ইতিবাচক প্রভাবটি রেখে থাকে। একজন চিকিৎসক অন্য আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছেও রোগীর সমস্ত তথ্য ও পরীক্ষার কাগজপত্র ইন্টারনেটেই প্রদান করতে পারেন। ফলে যোগযোগতা সহজ হয়ে যাওয়ায় সর্বোচ্চ ও সেরা মানুষের কাছ থেকে সেরা মানের সেবা পাওয়া নিশ্চিত করা যায় টেলিমেডিসিনে।
৫। দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাধা পড়ে না
একবার ভাবুন তো, আপনি যদি চিকিৎসকের সাথে দেখা করতে যান সেক্ষেত্রে সেইদিনের ঠিক কতগুলো কাজ আপনাকে আগে-পিছে করে সাজাতে হয়? নিশ্চয় অনেকগুলো? ব্যাপারটি আমাদের সবার ক্ষেত্রেই একিভাবে কাজ করে। একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া থেকে শুরু করে তার সাথে দেখা করার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে অফিস এবং অন্যান্য অনেকগুলো কাজকেই পিছিয়ে নিতে হয় বা বাদ দিতে হয়। আর যদি কোন মানুষ গ্রাম বা মফস্বল বা দূর থেকে আসেন চিকিৎসা সেবা নিতে, সেক্ষেত্রে হয়তো অনেক জরুরী কাজকেই সুস্থতার কথা ভেবে বাদ দিতে হয়। আর্থিক ও সামাজিক নানা ক্ষতি সম্পন্ন হয় এক্ষেত্রে। আর এই সমস্যাটির পুরোপুরি সমাধান করে দেয় টেলিমেডিসিন। টেলিমেডিসিনে যেহেতু দূর থেকেই সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়, তাই রোগী বা চিকিৎসক কাউকেই যাতায়াত করতে হয় না এবং নিজের কাজগুলোকে পিছিয়ে নিতে হয় না। একজন মানুষ নিজের প্রাত্যাহিক কাজের পাশাপাশিই নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসকের সাথে দেখা ও পরামর্শ করাটা সেরে নিতে পারেন টেলিমেডিসিনে।
৬। দ্রুততম সেবা
যাতায়াত এবং অন্যান্য কারণে রোগীর সেবা পেতে অনেকসময় দেরী হয়। তবে যদি সেবাটা টেলিমেডিসিনে নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে এটি সবচাইতে দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।
৭। বিশেষজ্ঞদের মতামত পাওয়ার সুবিধা
টেলিমেডিসিনে একইসাথে সব রগের বিশেষজ্ঞদের ইন্টারনেটে খুঁজে নিতে পারবেন আপনি। তাই এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত পাওয়াটাও সহজ হয়ে পড়ে।
কখন টেলিমেডিসিন গ্রহণ
করবেন না?
টেলিমেডিসিন অত্যন্ত কার্যকরী একটি
পদ্ধতি হলেও কিছুক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের ব্যাপারে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা
ভালো। সেগুলো হলো-
১। অত্যন্ত অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে
টেলিমেডিসিনের বদলে সম্ভব হলে চিকিৎসকের সরাসরি যোগাযোগের
মাধ্যমে সেবা নেওয়া ভালো। অনেকসময় টেলিমেডিসিনে ক্রনিক রোগের
ব্যাপারে সম্পূর্ণ পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব নাও হতে পারে।
২। প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং যন্ত্রপাতি
কম থাকলে সেক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ
বুঝে নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে বাড়তি কোন সহযোগী রাখা উচিত। বিশেষ করে
বয়স্কদের ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনে অনেকসময় সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৩। টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে
ভিডিও কলের। যথাযথ যন্ত্রপাতি না থাকলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর সময়া সঠিকভাবে
নাও বুঝতে পারেন। এক্ষেত্রে ভুলভাল চিকিৎসা না গ্রহণ করে সরাসরি চিকিৎসকের সাথে
যোগাযোগ করা উচিত।
কোন কোন চিকিৎসা
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে গ্রহণ করা সম্ভব?
দূরবর্তী অবস্থানে থেকে চিকিৎসক যেকোনো রোগীকেই পরামর্শ প্রদান করতে পারেন। তবে পুরোপুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে অসুখ বা শারীরিক অবস্থাগুলো টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পুরোপুরি আয়ত্বে রাখা সম্ভব হয় যেগুলো হলো-
১। টেলিরিহ্যাবিলিটেশন
রিহ্যাবিলিটেশনের জন্য চিকিৎসকদের যে সবসময় রোগীর কাছের থাকতে হবে এমনটা নয়। এক্ষেত্রে আমাদেরকে পুরোপুরি পেতে সাহায্য করে টেলিমেডিসিন। ফিজিক্যাল থেরাপিস্টদের দূর থেকেই যথাযথ যন্ত্রের মাধ্যমে রোগীদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে টেলিমেডিসিন। ভিডিও কলের পাশাপাশি এক্ষেত্রে রক্তচাপ পরিমাপ করা, শারীরিক কার্যক্রম ইত্যাদির ব্যাপারেও সাহায্য করে এই যন্ত্র। মনিটরের মাধ্যমে একজন রোগীর শরীরের ঠিক কতটুকু উন্নতি দেখা গিয়েছে সেটাও সঠিকভাবে বলতে পারেন চিকিৎসক, যেটি হাসপাতালে রোগীর ভর্তি হওয়া বা চিকিৎসকের যাওয়ার পরিমাণকে কমিয়ে আনে। রেকর্ড করা ভিডিও এবং রিয়েল টাইম ভিডিও- দুটোই রোগীকে আঘাত পাওয়া এবং মানসিক সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সাহয্য করে।
২। টেলিডার্মেটোলজি
ত্বকের সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধান ঘরে
বসে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য ভিডিও কনফারেন্স কিংবা ছবিই যথেষ্ট।
ত্বকে কোন প্রদাহ দেখা গিয়েছে কিনা বা অন্য কোন সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা সঠিকভাবে
বলা সম্ভব এক্ষেত্রে।
৩। টেলিসাইকায়েট্রি
মানসিক সমস্যাগুলোর সমাধানও
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সম্ভব। বিশেষ করে
মনোবিদের সংখ্যা আমাদের দেশে শহরের বাইরে নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে
টেলিসাইকায়েট্রির মাধ্যমে দূর থেকে ভিডিওর মাধ্যমে সেশন সম্পন্ন করতে পারবেন একজন
ব্যক্তি।
৪। টেলিরেডিওলজি
রেডিওলোজির ক্ষেত্রে সবসময়েই রোগী চান ইমেজিংগুলো সম্পর্কে সেকেন্ড অপিনিয়ন নিতে, আরেকজন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলতে। সেক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন ঘরে বসেই দূর থেকে যথাযথ চিকিৎসা ও পরামর্শ পেতে সাহায্য করে।
টেলিমেডিসিন ব্যবহারের ক্ষেত্র কোনগুলো?
টেলিমেডিসিনের দ্বারা একজন ব্যক্তি ঠিক কোন কোন সুবিধাগুলো পেতে পারেন বা কীভাবে এটি ব্যবহার করতে পারেন তা পুরোপুরিই নির্ভর করে যন্ত্রপাতি কতটা উন্নত এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের উপরে। টেলিমেডিসিনের যে ব্যবহারগুলো হতে পারে চিকিৎসাক্ষেত্রে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যাপার হলো-
১। লক্ষণ পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করা
আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে ঘটা অনেক অসুস্থতার চিকিৎসাই ঘরে বসে করা সম্ভব। সাধারণ কিছু তথ্যের অভাবেই আমরা চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য হয় এসব ক্ষেত্রে। এই যেমন- সাধারণ ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, অ্যালার্জি ইত্যাদির ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন ব্যবহারের মাধ্যমে লক্ষণ পর্যবেক্ষণ এবং এর পরীক্ষা করা সম্ভব।
২। হাসপাতাল পরবর্তী চিকিৎসা
অপারেশন বা সার্জারির পর কিছুদিন একটু সতর্কতা অবলম্বন করার দরকার পড়ে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে রোগীর জন্য এই অবস্থায় ঘরে থাকাটাই সবচাইতে ভালো। তবে একইসাথে দরকার হয় চিকিৎসকের পরামর্শেরও। এজন্য ব্যবহার করা হয় টেলিমেডিসিন।
৩। ফলো-আপ ভিজিট
আপনি আপনার মধ্যকার কোন একটি সমস্যার
সমাধানেরও ছয়মাস পর ফলো-আপ ভিজিটে চিকিৎসকের সাথে দেখা করতেই পারেন। তবে টেলিমেডিসিন
আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং অন্যান্য ঝক্কি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে এক্ষেত্রে। এটি
ব্যবহার করে দূর থেকেই ফলো-আপ সম্পন্ন করা সম্ভব।
৪। ক্রনিক ডিজিজের চিকিৎসা
ক্রনিক ডিজিজ সবসময় কিছু নিয়ম মেনে চলা, কিছু ব্যাপারে খেয়াল রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে আয়ত্বে তাহকে। আর এজন্য প্রয়োজন হয় প্রতিদিন বা কিছুদিন পরপর চিকিৎসকের দ্বারা পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে। আপনার ক্রনিক ডিজিজ আছে? নিবিড় চিকিৎসা পেতে সবচাইতে সহজ উপায় হিসেবে টেলিমেডিসিনই সবচাইতে বেশি কার্যকরী।
৫। প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া
অনেকসময় একজন রোগী আসলেই বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলার মতো অবস্থায় আছেন কিনা, নাকি তার শারীরিক অসুস্থতা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চললে বা ওষুধ গ্রহণ করলেই ঠিক হয়ে যাবে- সেটা বোঝার জন্য টেলিমেডিসিন কাজ করে। এতে করে একজন চিকিৎসককে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয় না এবং রোগী প্রাথমিক স্বাস্থ্য পচর্যার মাধ্যমেই টেলিমেডিসিনের দ্বারা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
৬। প্রেসক্রিপশন গ্রহণ
বেশ কিছু ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া প্রদান করে না দোকান থেকে। আবার সেই প্রেসক্রিপশনের তারিখ কয়েক মাস আগের হলেও সমস্যা তইরি হয়। শুধু একটি প্রেসক্রিপশন নবায়নের জন্য হাসপাতাল পর্যন্ত ছুটে যাওয়া? সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব টেলিমেডিসিন।
৭। এনাইসিইউ/আইসিইউ
এনাইসিইউ/আইসিইউ-এ টেলিমেডিসিন নানাভাবে কাজ করে থাকে। ওয়েব ক্যামের মাধ্যমে একটি শিশুকে বিভিন্ন দিক থেকে দেখা সম্ভব হয়। এতে করে অকালজাত শিশু বা অসুস্থ শিশুকে অন্য কোন হাসপাতালে পাঠানোর বদলে তাকে ভিডিওর মাধ্যমে দেখেই তার পরিচর্যা করা সম্ভব।
৮। ডিজাস্টার রিলিফ
কোন একটি স্থানে প্রাকৃতিক কোন দূর্ঘটনা ঘটলে একইসাথে অনেক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সেক্ষেত্রে একইসাথে এতো মানুষকে মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে চিকিৎসকের অপ্রতুলতা তখন সবচাইতে এবশি চোখে পড়ে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবেই ডিজাস্টার রিলিফের সময় টেলিমেডিসিন কাজ করে থাকে।
৯। মহামারী
বর্তমান সময়ে আমরা যে সমস্যাটির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেটি হলো কোভিড-১৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা মহামারী ঘোষণা করার পর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে যথাযথ কোন চিকিৎসা পদ্ধতি পাওয়া সম্ভব হয়। এই সময়ে চিকিৎসক কিংবা রোগী- কারো জন্যই যাতায়াত করার সুবিধা থাকে না। এক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন সবচাইতে বড় ভূমিকা পালন করে। ঘরে বসেই চিকিৎসকের সাথে দেখা করা ও তার সাথে পরামর্শ করে যথাযথ সেবা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় মহামারিকালীন সময়ে টেলিমেডিসিনকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি হিসেবে মনে করা হয় এবং এক্ষেত্রে একইসাথে অনেকগুলো রোগের ও রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব।
১০। আলোচনা ও পর্যালোচনা করা
টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে যে কাজটি চিকিৎসকেরা খুব সহজে করতে পারেন সেটি হলো একে অন্যের সাথে আলোচলা ও পর্যালোচনা করা। এটি খুব সহজেই বহু দেশে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞকে একসাথে কথা বলার এবং কোন সমস্যার সমাধান বের করার জন্য জায়গা করে দেয়। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে, যেখানে কোন দেশের চিকিৎসক বা গবেষকের পক্ষেই যথাযথ কোন চিকিৎসা বের করা সম্ভব হচ্ছে না, টেলিমেডিসিন একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে যেটি সবাইকে একসাথে ভাবতে, একে অন্যের সাথে আলোচনা করতে এবং কোন সমাধান বের করতে সাহায্য করতে পারে।
টেলিমেডিসিনের দ্বারা কোন
কোন অসুখগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব?
যদিও লক্ষণ এবং যন্ত্রপাতির উপরে
নির্ভর করে উন্নত পরীক্ষা করা সম্ভব। তবে সাধারণত টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে-
সর্দি-কাশি
মাথাব্যথা
পোকার কামড়
গলা ব্যথা
ইউটিআই
বমিভাব
ডায়রিয়া
কফ
কোষ্ঠকাঠিন্য
অ্যালার্জি
গোলাপি চোখ
প্যানিক ডিজঅর্ডার
নেশা
বাইপোলার ডিজঅর্ডার
ইটিং ডিজঅর্ডার ইত্যাদি সংক্রান্ত
লক্ষণ খেয়াল করা এবং চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়।
কোভিড-১৯ মহামারিকালীন পরিস্থিতিতে কেন টেলিমেডিসিন
প্রয়োজন?
কোভিড-১৯ ভাইরাস এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানী এবং পুরো
পৃথিবীর কাছে রহস্য। এখনো পর্যন্ত এই সমস্যাটির সমাধান বের করা সম্ভব হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের
মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোভিড-১৯এ আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখতে
পাবেন নিজের শরীরে। এর বেশি খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে এই সবটাই সম্ভব হবে যদি সেই
ব্যক্তি নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলেন।
যেহেতু বাংলাদেশে চিকিৎসক এবং চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা
রয়েছে, এসময় কোভিড-১৯এর লক্ষণ দেখা দিলে বা করোনা পজিটিভ আসলে সেটা নিয়ে হাসপাতালে
যাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে। এবং যেতে পারলেও যথাযথ সেবা বা অবস্থান করার কোন মাধ্যম
পাওয়া যাচ্ছে না। আর এজন্য চিকিৎসকেরা ঘরে বসেই করোনার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলছেন।
এখন প্রশ্ন হলো- কোন চিকিৎসার কথা বলছেন তারা? কোন চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে হবে? আর
যদি চিকিৎসকের সাথে দেখা করতেই হয়, সেক্ষেত্রে কোভিড-১৯এ আক্রান্ত হওয়ার বা এই ভাইরাসকে
ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। যেটা আমাদের কেউই চাই না।
আর এজন্যই সবচাইতে বড় চিকিৎসা মাধ্যম হিসেবে
এসময় ব্যবহার করা হচ্ছে টেলিমেডিসিন। আর এটি কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্যও করবে।
কারণ, এতে করে একজন ব্যক্তি তার শারীরিক অবস্থা এবং লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুসারে বাসায় থেকেই যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকতে পারবেন। আর এই ব্যাপারটি যে শুধু
কোভিড-১৯এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়।
বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি
নন, অনেক রোগীই চিকিৎসা নিতে পারছেন না। চর্মরোগ, থেরাপি, পিঠ ব্যথা ইত্যাদি অনেক সমস্যার
জন্যই নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে দেখা করা প্রয়োজন হয়। যেটি এখন সম্ভব হচ্ছে না। আর সেজন্যই
চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা না করে যথাযথ চিকিৎসা পেতে ঘরে বসেই
টেলিমেডিসিন ব্যবহার করতে উৎসাহী হচ্ছেন মানুষ।
চিকিৎসা যদি ঘরেই সম্ভব হয়, তাহলে আর
বাইরে গিয়ে অযথা কষ্ট করা কেন? নিজের সময় আর অর্থকে বাঁচাতে এবং দ্রুত বিশেষজ্ঞের
মতামত পেতে টেলিমেডিসিন ব্যবহার করুন এবং ঘরে বসেই চিকিৎসকদের সেবা নিশ্চিত করুন।
টেলিমেডিসিন সেবা পেতে ক্লিক করুন এখানে কুইমেড।